মোহাম্মদ পারভেজ
জাতীয় নির্বাচন শেষে দেশে নতুন সরকার গঠন হয়েছে। তাই রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। করোনা ও বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু বছর পর এবার অনেকটা ‘নির্ভেজাল’ বইমেলা আশা করছেন লেখক-পাঠক-প্রকাশকরা। জমজমাট মেলার আশা করছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিও। মেলা ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ার ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকছে এবার। তবে পুলিশ বলছে, মেট্রোরেলের কারণে লোকসমাগম যেমন বাড়বে, তেমন মেট্রোরেলের নিরাপত্তাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এসব বিবেচনায় রেখে বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, প্রতিবছর বইমেলা কেন্দ্র করে মেলা প্রাঙ্গণসহ চারপাশ ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় সাজানো হয়। জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ, চুরি-ছিনতাই, অগ্নিকাণ্ড, ট্রাফিকসহ সব জমজমাট মেলার আশা করছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিও। দিক বিবেচনায় রেখে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। এরপরও বিগত বছরগুলোতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়নি। গত বছর মেলা চলাকালে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নামে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার ওপর বোমা হামলার হুমকি দিয়ে উড়োচিঠি পাঠানো হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মেলাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি শহীদ মিনার ও শাহবাগ-নীলক্ষেত এলাকায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে থাকবে তল্লাশি দল। সন্দেহজনক কিছু দেখলে তারা তল্লাশি করবেন।
ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের ওপর ভিত্তি করেই নিরাপত্তা বলয় সাজানো হয়। যখন যে ধরনের নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়, সে ধরনের নিরাপত্তা আমরা প্রয়োগ করি। বইমেলায় এবার মেট্রোরেল একটি চ্যালেঞ্জ। মেট্রোরেলের কারণে বইমেলায় মানুষের যাতায়াত বাড়বে। সবকিছু বিবেচনা করে এবার নিরাপত্তার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূল মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। কাউকে সন্দেহ হলে তাকে আলাদা কক্ষে নিয়ে তল্লাশি করা হবে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য থাকবে আলাদা গেট, যাতে বের হওয়ার সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
ডিএমপি জানায়, মেলা প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। মেলায় স্থাপিত ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি নজরদারি করা হবে। সিসি ক্যামেরায় সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটরিং করার পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ার থেকেও নজরদারি করা হবে। মেলায় সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকধারী সদস্য মোতায়েন থাকবে। মেলার আশপাশে থাকবে মোটরসাইকেল ও গাড়ি টহল। এছাড়া সিটিটিসি, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ভ্যান ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে। মেলা শুরুর আগে পুরো এলাকা ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যে কোনো প্রয়োজনে প্রস্তুত থাকবে র্যাবের হেলিকপ্টার।
একনজরে পুলিশের নিরাপত্তা বলয়
>> মেট্রোরেল স্টেশনে ওপরে ও নিচে ফোর্স বাড়ানো হবে।
>> প্রত্যেক দর্শনার্থীকে আর্চওয়ে দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে হবে।
>> বইমেলার ভেতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত সংখ্যক সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পুলিশ ডিউটিতে নিয়োজিত থাকবে।
>> সিসি ক্যামেরা দিয়ে মেলার ভেতরে ও চারপাশে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে।
>> শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশনে নিরাপত্তা বাহিনী বাড়ানো হচ্ছে।
>> প্রস্তুত থাকবে সিটিটিসি, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, র্যাবের স্কোয়াড ও হেলিকপ্টার।
>> সাইবার জগতেও নজরদারি চালাবে পুলিশ।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, মেলার সার্বিক দিক নিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবো। তবে মেলার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত নই।
এমআরটি পুলিশের প্রধান (ডিআইজি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে মানুষের ব্যাপক ভিড় হতে পারে। বইমেলা কেন্দ্র করে পুরো মাস মেট্রোরেল স্টেশনে ওপরে ও নিচে ফোর্সের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। এ মেলা কেন্দ্র করে এর আগে বিভিন্ন নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হয়েছে। উগ্রবাদীরা এসব ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে।’
তিনি বলেন, ‘অতীতের ঘটনাগুলো মাথায় রেখে আসন্ন একুশে বইমেলায় র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের সাইবার টিম কাজ করছে। মেলার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হবে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সব গেটে থাকবে র্যাবের বিশেষ টিম। র্যাবের ডগ স্কোয়াড ও যে কোনো প্রয়োজনে হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন জাগো নিউজে বলেন, ‘বরাবরের মতো দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য নারী-পুরুষের আলাদা বুথ থাকবে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়া সব গেটে থাকবে আর্চওয়ে। ব্যাগ নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তল্লাশি করা হবে।’
‘পাশাপাশি মেলার চারপাশে টহল টিম অবস্থান করবে। মেলা কেন্দ্র করে সাইবার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যদি কোনো উসকানিমূলক লেখা পাওয়া যায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমআরটি পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির অধিভুক্ত স্থানে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।’
১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৪’ উদ্বোধন করবেন। ফেব্রুয়ারিজুড়ে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলবে বাঙালির প্রাণের এ মেলা। লিপইয়ারের কারণে এ বছর মেলা হবে ২৯ দিন। বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, প্যাভিলিয়ন ও স্টলের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা সারি। প্রবেশদ্বার থাকবে চারটি। টিএসসির উল্টোদিকের প্রবেশদ্বার, বাংলা একাডেমির উল্টোদিক ও রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী প্রবেশপথ।
গত বছর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের (আইইবি) দিকের প্রবেশপথটি সপ্তাহে পাঁচদিন বন্ধ থাকতো। এবার তা পূর্ণ সময় খোলা থাকবে। রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী মেলার অংশটুকু হবে শিশুচত্বর। প্রতিবারের মতো এ বছরও বইমেলায় খাবারের দোকান থাকছে। মেলায় খাবারের দোকান থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শেষ প্রান্তে। চুলা বন্ধ রাখাসাপেক্ষে তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এই বাংলা/এমপি