খান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ||
চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখ পড়ে না। কর্মকর্তাদের সাথে দফারফা করেই ফয়েজ লেকসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা হয়। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে ঘুষের সমঝোতায় রাজি না হলে টিলা, ছনখোলাকে ‘পাহাড় ‘ উল্লেখ করে চালানো হয় লোক দেখানো অভিযান।
রবিবার চট্টগ্রামের অভিজাত খুলশী ক্লাবের কর্মকর্তাদের কাছে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে খুলশী ক্লাব লিমিটেড। রবিবার দুপরে চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক এলাকায় অবস্থিত ক্লাব চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসের দুই লাখ টাকা চাঁদার ফরমায়েশ পুরন না করার কারণে ক্লাবের সহ সভাপতিসহ আটজনের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার মামলা করা হয়েছে -এমন অভিযোগ করা হয়।
খুলশী ক্লাবের সহ সভাপতি মো. রফিক উদ্দিন বাবুল ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে ওয়াকওয়ে ও বিউটিফিকেশনের কাজ চলছিল। সে হিসাবে বাউন্ডারি ওয়ালসহ চার ফিট ওয়াকওয়ে করার জন্য যে টিলাটা আছে সেটা ড্রেসিংয়ের কাজ চলছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন সকালে আসছে তাদেরকে আমরা দেখিয়েছি। পরবর্তীতে পুলিশ এনে আমাদের শ্রমিকদের ধরে নিয়ে গেছে। ঘটনা জানতে পেরে দ্রুত পরিবেশ অধিদপ্তরে হাজির হয়ে শ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাই। সেসময় হিল্লোল বিশ্বাস আমাদের কাছে দুই লাখ দাবি করেন। একই সাথে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে নিয়ে কটুক্তি করেছেন ওই কর্মকর্তা।’
গেল ১৫ ফেব্রুয়ারী পাহাড় কাটার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের অভিজাত খুলশী ক্লাবের সহ-সভাপতি মো. রফিক উদ্দিন বাবুলের (৫৪) বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। মামলায় ক্লাবের কেয়ারটেকার মোহাম্মদ হাসান উদ্দিনসহ (৩০) আটজনকে আসামি করা হয়েছিল।খুলশী থানায় মামলাটি করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. সাখাওয়াত হোসাইন। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয় মামলার আগেই হিল্লোল বিশ্বাস ক্লাব কর্মকর্তাদের কাছে ‘ঘুষ দাবি’ করেছিলেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় পাহাড় কাটার সময় ৬ জনকে আটক করা হলেও ; আটক করা ব্যক্তিদের পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন রফিক উদ্দিনের বাবুল। সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে খুলশী ক্লাবের কর্মকর্তারা বলেন মামলার নেপথ্যে ঘুষ দাবি। খুলশী ক্লাব নিজেদের ক্রয় করা জমিতে সৌন্দর্য বর্দ্ধনের কাজ করে আসছিল।
জানতে চাওয়া হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ঘুষ দাবির অভিযোগ সত্য নয়। ওখানে পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে খুলশীর ফয়স লেক এলাকায় পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালানো হয়। এসময় খুলশী ক্লাবের পাশের একটি পাহাড় কাটার সময় ৬ জনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। যে পাহাড়টি কাটা হচ্ছিল সেটির মালিক রফিক উদ্দিন বাবুল। বাবুল খুলশী ক্লাবের সহ-সভাপতি। পাহাড় কাটার সময় ৬ জনকে আটক করে পরিবেশ অধিদপ্তরে নেওয়া হলে সেখান থেকে তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বাবুল। তবে তিনি কৌশলে চলে যান। পরে বাবুলসহ ৮ জনকে আসামি করে খুলশী থানায় মামলা করা হয়।
চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে সমঝোতা করে পাহাড় কাটার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গেল দশ বছর এই এলাকায় একশোর বেশি পাহাড় কাটা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয় নি পরিবেশ অধিদপ্তর। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় একই এলাকায় অবস্থিত। ২০১৮ সালে নগরের পশ্চিম খুলশীতে ১০ দিনে প্রায় আড়াই একর পাহাড় কেটে ফেলা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান চালায় নি । এই বিষয়ে তৎকালীন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমানের কাছে অভিযোগ করেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটায় ব্যবহৃত তিনটি এক্সকাভেটর উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে জেলা প্রশাসনের অভিযানের খবর ফাঁস হবার কারনে কৌশলে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা পালিয়ে যান।খুলশী থানার জালালাবাদ হাউজিং এলাকার পাশে এসব পাহাড় কাটা হচ্ছিল। লোহাগাড়া হাউজিং সোসাইটির নামে এই পাহাড় কাটা হলেও নিরব ভূমিকা পালন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সেই সোসাইটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মসজিদ বানানোর নাম করে সাবাড় করে বেশকিছু পাহাড়। এছাড়া ভিআইপি হাউজিংএ প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে ভবন নির্মান করেছে পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। গোল পাহাড় নামে খ্যাত পাহাড়টিও পাহাড় খেকোদের কবল থেকে রক্ষা করতে পারে নি পরিবেশ অধিদপ্তর। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সেই পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।