28 C
Dhaka
Monday, March 24, 2025
More

    মেয়র রেজাউলের দুই বছর ‘ লেজেগোবরে চসিক’

    আরও পড়ুন

    নানা অনিয়ম, নাগরিক পরিসেবায় ভোগান্তি, কর আদায়ে ঘুষ, উন্নয়ন প্রকল্পে লুটপাট- এমন বিশেষন ছাড়া গেল দুই বছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিমের প্রাপ্তি খাতা পুরোটাই শুন্য। নির্বাচনের সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কোন ইতিবাচক কর্মতৎপরতা ছাড়াই ১৫ ই ফেব্রুয়ারী তার মেয়র হিসেবে দুই বছর পুর্ণ হয়েছে।

    নিজে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেও নগরবাসীকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে সেবা প্রাপ্তিতে ভোগান্তি আর করের বোঝা নিয়ে। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগ, বিদ্যুৎ উপ বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, পরিছন্নতা বিভাগ ছাড়িয়ে; দুর্নীতি  অনিয়মের সিল পড়েছে শিক্ষা বিভাগেও।

    বছরজুড়ে নানা অনিয়মের কারণে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রকল্প পরিচালককে তার কার্যালয়ে ডুকে মারধরের ঘটনাকে নগর ভবন জুড়ে দুই বছরের অনিয়মের ফলাফল হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। ২৯ ডিসেম্বর একই ধরনের পাতানো ঘটনায় নাজেহাল হয়ে সিটি করপোরেশন ছাড়েন সাবেক প্রধান নির্বাহী শহিদুল আলম। সুত্রমতে, চসিক কার্যালয়ে  বিক্ষুব্ধ  অস্থায়ী কর্মচারীদের লেলিয়ে দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে। ঠিক একমাস পর প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানীকে মারধর করেন ক্ষুব্ধ  ঠিকাদাররা।

    দুই সপ্তাহের মধ্য মশার ওষধ ক্রয়ে অনিয়ম পায় দুদক কর্মকর্তারা। কোন ধরনের টেন্ডার আহ্বান না করে একই ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা হয়েছে নিম্মমানের মশার ওষধ। নতুন করে সংবাদের শিরোনাম হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এরআগে ভারতীয় নমনীয় ঋণ সুবিধার এলইডি প্রকল্পের দরপত্রে অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে দেশজুড়ে আলোচিত হন বিদ্যুৎ উপ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ। অভিযোগ উঠে, তার নিজের পছন্দের দুই প্রতিষ্ঠানের একটিকে কাজ পাইয়ে দিতে আন্তর্জাতিক  দরপত্রে নিয়ম বহির্ভূত  শর্ত জুড়ে দেন তিনি। স্থানীয় উপ ঠিকাদার হিসেবে এইচটিএমএস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে মুল্যায়নে সর্বাধিক নাম্বার প্রদান করা হয়।প্রতিষ্ঠানটির মালিক আফতাব আহমেদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের  কালো তালিকাভুক্ত -এমন খবরে অভিযুক্ত  প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করে নথি জালিয়াতির কূটকৌশল নেয় চসিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের আষ্কারা পেয়ে এমন নজিরবিহীন অনিয়ম করেছেন বিদ্যুৎ উপ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ। প্রকল্পটির ডিপিপি পরিবর্তন, দরপত্রর  নথি গোপন ও টেন্ডার ওপেনিং কমিটি গঠন না করে দরপত্র খোলার অভিযোগে তাকে  দুইবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। এভাবেই প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ  সাড়ে তিন বছর পার করেছেন ২৬১ কোটি টাকার এলইডি প্রকল্প বাস্তবায়নে।

    জাইকার অর্থায়নে চলা আরেকটি এলইডি প্রকল্পে নিম্মমানের বাতি, ক্যাবেল, পোল স্থাপনের বিষয় খোদ চসিকের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসে। কিন্তু সেই প্রতিবেদনকে ‘তথাকথিত তদন্ত’ বলে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেও প্রকল্প পরিচালক  বহাল আছেন চসিকে। ২৬১ কোটি টাকার এলইডি প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে অনিয়মে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙ্গেন প্রকৌশলী ঝুলন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ প্রকৌশলী নিজের কর্মক্ষেত্রে ঠিকাদারী করছেন। কোন অভিযোগ আমলেই নেন নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম।

    ডোর টু ডোর ময়লা সংগ্রহের প্রকল্পে ভুতুড়ে শ্রমিক নিয়োগ, গৃহকর আপিলের নামে ঘুষ বাণিজ্য, চসিকের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে  যৌন নিপিড়নের অভিযোগ, আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি  দেখিয়ে সহকারী  প্রকৌশলী নিয়োগ, পদোন্নতি না দিয়ে অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে  নতুন প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়া – অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হলেও নগর পিতা হিসেবে অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে  মেয়র রেজাউল করিমের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।

    তবে, মেয়র রেজাউল করিমের দাবি তার মেয়াদকালে নগরবাসী ভোগান্তিবিহীন সেবা পাচ্ছে। মেয়র রেজাউল করিম এই বিষয়ে যতোটা আত্মবিশ্বাসী চট্টগ্রামের সুশীল সমাজ ততখানি বিব্রত।

    সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট আকতার উল কবির মনে করেন,  মেয়র রেজাউলের সময়কালে চসিকে শৃঙ্খলা ফিরেনি। নাগরিকদের  সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘ সিটি করপোরেশন ‘অনিয়ম দূর্নীতির ঘাঁটিতে রুপান্তরিত হয়েছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে মেয়রকে সোচ্চার হতে দেখা যায় নি। ‘

    চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) গৃহকরের আপিল শুনানি নিয়ে গেল বছরের অক্টোবর মাসে ২০০ কোটি টাকার ‘ঘুষ’-বাণিজ্য হচ্ছে এমন অভিযোগ করেছিলেন করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা। সেই অভিযোগও আমলে নেন নি মেয়র রেজাউল করিম।

    চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিছন্নতা বিভাগের উপ প্রধান কর্মকর্তা মোরশেদ আলম   প্রভাব খাটিয়ে ছেলে নাজমুল হাসানকে পরিচ্ছন্ন সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দেয় । এছাড়াও তার গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলার ইলশা গ্রামে দুই কোটি টাকা বাড়ি, নগরীর পূর্ব বাকলিয়ার কালামিয়া বাজারে পাঁচতলা বাড়ি, অনন্য আবাসিকে দুইটি প্লট, স্ত্রী ও সন্তানদের নামে কোটি কোটি টাকা অবৈধ অর্জনের অভিযোগও মেয়র তোষনে আড়াল হয়েছে। বেসরকারি টেলিভিশন ও বেশ কিছু জাতীয় দৈনিকে চসিকের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনের ব্যবসা, জামাত সংশ্লিষ্টদের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কারখানা প্রতিষ্ঠা, নিজের ভাইদেরকে সিটি করপোরেশনে ঠিকাদারীর কাজ দেবা, শতকোটি টাকার সম্পদ উপার্জনের  মতো পাহাড়সম অভিযোগের বিপরীতে মেয়র রেজাউল করিমের নিরবতা আওয়ামী লীগ ঘরনার সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরকেও বিব্রত করেছে৷

    - Advertisement -spot_img

    সবশেষ খবর