নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী ::
-
২৭ মামলার আসামী লিয়াকতের নেতৃত্বে পুলিশের উপর হামলার জেরবাঁশখালীর আলোচিত গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যানের ৭দিনের রিমান্ড আবেদন
-
অস্ত্র উদ্ধার
পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় আলোচিত গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাইনুল ইসলামের আদালতে করা ওই রিমান্ড আবেদন আগামী রোববার খোলার তারিখে শুনানি করা হবে। আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ভোরে চেয়ারম্যান লিয়াকতকে গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত পৃথক পৃথক ভাবে নয়জনকে হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক উৎপাদনকারী আইন, নাশকতার ঘটনা, চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা ছিল। ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার পর বৃহস্পতিবার রাতে এস আই লিটন চাকমা বাদি হয়ে পুলিশের ওপর হামলার অপরাধে তাকে প্রধান আসামী করে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে হামলা মামলা করা হয় । একই সাথে চাঁদা দাবির অপরাধে এস সিলভার হোয়াইট এসোসিয়েটস্ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জাহেদী হাসান বাদি হয়ে তাকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন । এবং ডিবি পুলিশের এস আই হুমায়ন কবির বাদি হয়ে তাকে একমাত্র আসামি করে সক্রিয় এলজি ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধারের অভিযোগে অস্ত্র মামলাসহ পৃথক পৃথক ৩টি মামলা করায় সর্বমোট ২৭টি মামলার আসামি তিনি ।
সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) কামরুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান লিয়াকতের বিরুদ্ধে করা নতুন ৩ মামলায় পৃথক পৃথকভাবে রিমান্ড আবেদন করা হবে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ওপর হামলা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। ওই রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি এখনো। পরে অন্যান্য মামলায় আবেদন করা হবে। বর্তমানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বালি নিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসার বিরোধে চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে পৃথক পৃথক কয়েক দফা হামলায় ৬ পুলিশসহ ১৩ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। সন্ত্রাসীরাও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। বৃহস্পতিবাার ভোরে তাকে চট্টগ্রাম মহানগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান লিয়াকত যেভাবে আলোচিত ঃ বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী ও তার বাহিনীর নেতৃত্বে ১৮বার হামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সন্ত্রাসীদের হামলায় মোট ১৩ জন নিহত ও আহত হয়েছে অন্ততঃ ৩ শতাধিক। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঠিকাদারি নিয়ে লিয়াকত আলী শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন । জমি কিনেছেন অন্ততঃ ৭৫ একর। তাছাড়া ওই টাকা প্রকাশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাষ্ট্র বিরোধী বিক্ষোভে নিজে মিছিলে সম্মুখে উপস্থিত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে উষ্কানী ছড়ালেও বাঁশখালীর আওয়ামীলীগ নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে নিরব ছিল। যা বাঁশখালীর রাজনৈতিক ইতিহাসে ছোট বড় সবার মধ্যে ছিল আলোচনার বিষয়।
এছাড়াও গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান পলাতক আসামী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি সাবেক যুগ্ম আহŸায়ক লিয়াকত আলী, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি করে বক্তব্য দিয়ে আলোচিত ছিল এবং বাঁশখালীর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে টাকা দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অধিকাংশ স্কুলের সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সৃজনশীল প্রশ্নে ‘ তাঁর সাথে বঙ্গবন্ধুর তুলনা করে প্রশ্নপত্র করেছিল। ওই প্রশ্নপত্রের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ১৩ জন শিক্ষক জেল কেটেছিল। এখনও মামলাটি চলমান। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে গত ২০১৭ সালের ২৫ মে চেয়ারম্যান পদে শপথ গ্রহণের পর ১ বারের জন্যও উপজেলা আইন শৃংখলা সভা ও উপজেলা সমন্বয় সভায় উপস্থিত না থেকে চেয়ারম্যানি পদ বহাল রেখেছেন। এর পরবর্তীতে আবারো ২০২২ সালের ৪ আগষ্ট আবারো শপথ গ্রহণ করে গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। তারপরও বাঁশখালী উপজেলা সমন্বয় সভা ও আইনশৃংখলা সভায় উপস্থিত থাকেন না।রহস্য ঘেরা পলাতক লিয়াকতের ২৭টি মামলার কয়েকটি হচ্ছে ঃ ১৯৯৪ সালে গন্ডামারার আবু তাহের ও ১৯৯৯ সালে গন্ডামারার নুরুল কবিরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল গন্ডামারার মর্তুজা আলী, মো. আংকুর. জাকের আহম্মদ ও জাকের হোসেনসহ ৪ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রæয়ারী মোহাম্মদ আলীকেও প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, ২০১৪ সালে ১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯(এ) মামলা নং ১৭, ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রæয়ারী বিস্ফোরক উৎপাদনকারী আইন ( সংশোধিত ২০০২) এর ৩/৪ এর ধারায় মামলা।