খান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ::
হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ না দিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাবার জন্য গাড়িতে তুলে দেয় অভিযুক্তরা।বুয়েটের ‘আবরাব’ না হতে চাইলে এই ঘটনার পর চুপচাপ থাকার পরামর্শ দেয়া হয় তাদের।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে মারামারিতে জড়িয়ে বহিষ্কার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা অভিজিৎ দাশ, রিয়াজুল জয়, জাকির হোসেন সায়াল, মাহিন আহমেদ ও ইব্রাহিম সাকিবের বিরুদ্ধের এবার কলেজের চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শিবির আখ্যা দিয়ে বুধবার রাত ৩টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত তাদের নির্যাতন করা হয়।নির্যাতনের শিকার চার শিক্ষার্থী হলো ৬২তম ব্যাচের এম এ রায়হান, মোবাশ্বির হোসেন শুভ্র, জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল এবং সাকিব হোসেন।
বিষয়টি প্রথমে ‘শিক্ষার্থীরা বাথরুমে পড়ে যাওয়ার বিষয়’ বলে চালিয়ে দিয়ে অস্বীকার করেন চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার। পরে সাংবাদিকরা চমেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে নির্যাতিতদের ছবি তুলেছে এবং অভিভাবকদের সাথে কথা হয়েছে জানালে অধ্যক্ষ বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে আছি। শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বিষয়টি দেখছি। তবে তারা কোন অভিযোগ করেনি। ‘
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের মজুমদার বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমরা ছাত্রাবাসে নিয়মিত পুলিশের সাথে আরও পুলিশ মোতায়েন রেখেছি। নির্যাতনকারীদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছি।
জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের একজনের বাড়ি কুমিল্লা এবং অপরজনের বাড়ি নারায়নগঞ্জ। তাদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ না দিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাবার জন্য গাড়িতে তুলে দেয় অভিযুক্তরা।বুয়েটের ‘আবরাব’ না হতে চাইলে এই ঘটনার পর চুপচাপ থাকার পরামর্শ দেয়া হয় তাদের।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার দুই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এম এ রায়হানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়ে। তার বাবার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হন নি।
ছাত্রাবাসে অবস্থানরত একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে , বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাদেরকে ছাত্রাবাসের বিভিন্ন রুম থেকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। হোস্টেল এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিষয়টি জেনেও তাদের উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী এক চমেক ছাত্রের বাবা জানান, ‘ আমার ছেলে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়। তবুও তাকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। আতঙ্গে আমার পরিবারের সামনে বুয়েটের আবরারের ছবি ভাসছে৷ সেকারণে এসব বিষয়ে গণমাধ্যম লিখুক সেটাও আমি চাই না৷ ‘
ছাত্রলীগ নেতাদের টর্চার সেল নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে এই অভিভাবক কেঁদে ফেলেন। বলেন, ‘ লাঠি নিয়ে হাতের আঙুল ও হাতের পাতায় মারা হয়েছে। সে শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত এমন স্বীকারোক্তি নিতে চেয়েছে৷ ছেড়ে দেবার সময় বলেছে, ঘটনা ফাঁস করলে আবরারের পরিণতি হবে ‘।
জানা যায়, দীর্ঘসময় নির্যাতনের পর তাদের মোবাইল ফোন রেখে দেয়া হয়। টর্চার করে দিলেও মোবাইল ফেরত দেয়া হয় নি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ঘরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে মুখোমুখি। সংঘাত, দফায় দফায় সংষর্ষ গড়িয়েছে প্রতিপক্ষের একজনের মাথার হাঁড় ভেঙে দেবার মতো লোমহর্ষক ঘটনা পর্যন্ত। এরআগে একই চক্রের বিরুদ্ধে মেস ম্যানেজারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠে। সুত্রমতে, চমেক এলাকায় অবৈধভাবে বসানো দোকান থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায়ের পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত পড়েছে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ।